প্রজেক্টর কি, কিভাবে কাজ করে, দাম এবং বিস্তারিত আলোচনা
প্রোজেক্টর হল এক ইলেকট্রো-অপটিকাল যন্ত্র যা দিয়ে ভিডিও, ছবি ও বিভিন্ন তথ্য বড় স্ক্রিন করে দেখা যায়। এর ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ক্রমশই বেড়েই চলছে। বিভিন্ন সেমিনার, সভা, ক্লাসরুম, ট্রেইনিং, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রোজেক্টরের ব্যভার লক্ষ্য করা যায়। প্রোজেক্টরের প্রধান কার হচ্ছে কম্পিউটারের ডেটা বহুগুন বড় করে প্রর্দশন করা, একসাথে বহু সংখ্যক মানুষের সামনে বড় করে ডেটা প্রর্দশন করা।
প্রোজেক্টরের প্রকারভেদ
প্রজক্টর প্রধানত ২ প্রকার যেমন ডিএলপি (ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং) এবং এলসিডি(তরল স্ফটিক প্রদর্শন।
এলসিডিঃ এলসিডি টাইপ সাধারণত পোলারাইজড আয়নার সমন্বয়ে কাজ করে যা শুধুমাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট আলোকে প্রতিবিম্বিত করে। এই প্রযুক্তি লাল, নীল ও সবুজ প্রতিটি চ্যানেল কে আলাদা করে দেয় এবং পরে এলসিডি প্যানেল পেরিয়ে প্রিজমের মাধ্যমে পুনরায় তা ভিডিওতে রুপান্তর করে।
ডিএলপিঃ ডিএলপি প্রজেক্টর কে ওয়ান চিপ ও থ্রি চিপ হিসেবেও ধরা যায় যার প্রতিটি চিপে কয়েক মিলিয়ন আয়না থাকে এবং তা প্রতি সেকেন্ডে কয়েক হাজারের বেশি আলোক প্রতিবিম্বিত করে। ওয়ান-চিপ ডিএলপি প্রজেক্টর 16 মিলিয়নেরও বেশি রঙ উত্পাদন করতে পারে যখন থ্রি-চিপ মডেল 35 ট্রিলিয়ন এরও বেশি রঙ উত্পাদন করতে পারে। তাই এটি ভিডিও, ছবিকে আরও প্রাকৃতিক এবং জিবন্ত করে তোলে।
প্রোজেক্ট–এর সুবিধাসমূহ
যে কোন জায়গায় সিনেমা হলের আমেজ পাওয়া যায়
যেখানে একটি ছোট স্ক্রিনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, খেলা দেখতে গেলে তেমন একটা আনন্দ পোয়া যায় না, সেখানে বড় স্ক্রিনে দেখা এর আনন্দটা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া অনেকে একসাথে বসে একই সময়ে ভিডিও দেখতে পারে। বিশেষ করে প্রজেক্টরে বিশ্বকাপ খেলা দেখা খুবই আনন্দদায়ক কেননা সবাই একসাথে বসে এই খেলা দেখতে পারে বড় এক স্ক্রিনে। ঠিক যেন মনে হয় সরাসরি মাঠে গিয়ে খেলা দেখা হচ্ছে।
দুইভাবেই দেখা যায়
প্রজেক্টরের আরেকটি সুবিধা হল এটি দিয়ে পর্দার উপর প্রতিবিম্ব ফেলে ভিডিও দেখে যায় আবার ঘরের দেয়ালে প্রতিবিম্ব ফেলেও দেখা যায়। সেক্ষেত্রে দেয়ালের রঙ সাদা, অফ হোয়াইট, ক্রিম রঙের হলেই হয়। তা যাইহোক, আপনি চাইলে ঘরের দেয়ালে প্রজেক্টর দিয়ে ভিডিও দেখলে বাড়তি পর্দা কেনার খরচ লাগবে না।
ঘরের দেয়ালে দেখার জন্য প্রজেক্টরটি নির্দিষ্ট দুরত্বে বসাতে হয় এবং নিশ্চিত করতে হবে প্রজক্টরের ফোকাস লাইট/ লেন্স ও দেয়ালের মাঝে কোন প্রতিবন্ধক না থাকে তাহলে দেয়ালে ছবির ফোকাস পড়বে না। পর্দার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। প্রজেক্টর যতই দূরে স্থাপন করবেন, দেয়ালে বা পর্দায় ততটাই ছবি বড় করে ভাসবে। অনুরূপ, কাছে বসালে ছবির আকৃতি ছোট হয়ে যাবে।
এবার আসি পর্দার বিষয়ে, আপনি যদি বাইরে যে কোন আউটডোরে দেখতে চান তা আবার অনেক মানুষের সাথে একসঙ্গে তাহলে প্রজেক্টর ডিভাইসের সাথে মনের মত সাইজের একটি পর্দা কিনতে হবে। এই ধরণের পর্দা আবার সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় এর ব্যবহার দিনের দিনের কেবল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর পর্দাগুলো সাধারণ কাপড়ের মতই ভাজ করে যেখানে-সেখানে নিয়ে যাওয়া যায়। অবশ্য আপনি চাইলে পর্দা ঘরেরে মধ্যেও ব্যবহার করতে পারেন।
দুই ধরণের প্রজেক্টর পর্দা রয়েছে যেমন একটি ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে তৈরি আর অপরটি স্ট্যান্ড পর্দা যার দাম তুলনামূলকভাবে একটি বেশি। ডিজিটাল ব্যানারের পর্দার সামনের অংশ সাদার পিছনের অংশ কালো হয়।
বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে ব্যবহার করা যায়
বর্তমান সময়ের বেশিরভাগ প্রজেক্টরগুলো সব রকম ইলেক্ট্রিক ডিভাইসের সাহায্যে ব্যবহার করা যায় যেমন ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টিভি এবং মোবাইল ফোন থেকে প্রজেক্টর ব্যবহার করা যায়। ধরুন পেনড্রাইভ, কার্ড রিডার, সরাসরি ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের সঙ্গে তার দিয়ে সংযোগ দেওয়া।
এই সময়ের প্রজেক্টরগুলো প্রায় সব ডিভাইসগুলোতে সংযোগ দেওয়া যায়। আধুনিক প্রজেক্টরে সব সংযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন ধরুণ কেব্ল টিভি থেকে সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রজেক্টরে একটা পোর্ট রয়েছে। প্রজেক্টরের সঙ্গে একটা তার দেওয়া থাকে আর এই তারটির একটি অংশ ডিশের সংযোগ আছে এমন টিভিতে এবং আরেকটি অংশ প্রজেক্টরে লাগাতে হবে। স্মার্ট টিভি যেটাতে ইন্টারনেট সংযোগ ডীয়ে ব্যবহার করা যায় সেটাতে প্রজেক্টর সুবিধাও পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে আধুনিক প্রজেক্টরগুলো দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বড় স্ক্রিন করে ভিডিও দেখা যায়।। এর জন্য উভউ ডিভাইসে ব্লুটুথ অপশন চালু করতে হবে। এ ছাড়াও আপনি বাজারে কিছু ছোট আকারের প্রজেক্টর পাবেন যা সরাসরি মোবাইল ফোনের পেছনে ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। যার ফলে আপনার মোবাইল ফোনে যাই চালু করবেন তা–ই দেখা যাবে। কিন্তু এই ধরোণের প্রোজেক্টরের দাম তুলনামূলক কম হওয়াতে এর স্থায়িত্বও কম।
প্রজেক্টর কেনার পূর্বে বিবেচ্য বিষয়
প্রজেক্টর কিনে তার ব্যবহার সর্বোচ্চকরণে আপনার বেশ কিছু বিষয় বেবেচনায় রাখতে হবে। নতুব আপনী কাঙ্খিত সুবধা থেকে বঞ্চিত হবেন। এমনকি সে প্রজেক্টরের পেছনে আপনার ক্রয়কৃত টাকাটাই জলে যাবে। চলুন জেনে নেই বিবেচ্য বিষয়াদি।
শব্দ
প্রজেক্টরে যেহেতু ভিডিও বড় করে বড় স্ক্রিনে দেখা যায়, তাই এর সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো হতে হয় নাহলে প্রকৃত প্রজেক্টরের ভিডিও দেখার আমেজ পাওয়া যায় না। যদিও প্রজেক্টরে বিল্ট-ইন স্পিকার থাকে তবে এর সাউন্ড কোয়ালিটি হল গুরুত্বপূর্ণ একোটি বিষয়। এর শব্দ সাদাহারনত কম হয়ে থাকে তাই উচ্চ শব্দের জনয় আপনাকে আলাদা স্পিকার ব্যবহার করতে হবে।
এর জন্য আপনাকে হোম থিয়েটার সাউন্ড সিস্টেম কিনে নিতে হবে। মানে দাঁড়ায়, আপনি যে মানের সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করবেন, ঠিক সেই মানের সাউন্ড কোয়ালিটি পাবেন। আর রিমোটের ব্যবহারের নিয়ম আর পাঁচটা টেলিভিশনের রিমোটের মতোই।
দাম ও ব্র্যান্ড
বাংলাদেশের বাজারে ইপসন আসুস, লেনোভো, ভিভিটেক, ক্যাসিও, হিটাসি, প্যানাসনিক, , তোশিবা, বেনকিউ, ভ্যালুটপসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রজেক্টর পাওয়া যায়। তাছাড়া কিছু চাইনিজ ব্র্যান্ডের প্রজেক্টরও পাওয়া যায়। মূলত মান ও ব্র্যান্ডের ওপর প্রজেক্টের দাম নির্ভর করে। এর দাম ৮ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
প্রজেক্টর কোথায় কিনতে পাওয়া যায় যেখানে
প্রজেক্টর সাধারণত সকল আইটি বা কম্পিউটার মার্কেটে পাওয়া যায়। এর মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডে বিভিন্ন কম্পিউটার মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, আইডিবি বসুন্ধরা সিটি, ইস্টার্ন প্লাস, স্টেডিয়াম মার্কেটে,ইস্টার্ন প্লাজাতেও পাওয়া যায়। তাছাড়া বর্তমান অনলাইন নির্ভর মার্কেটে আপনি বিভিন্ন অনলাইন শপে এটি পেয়ে যাবেন।
আমরা (অলেফিন্স ট্রেড কর্পোরেশন) দিচ্ছি ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের প্রজেক্টর এবং এর প্রয়োজনীয় সকল এক্সসরিজ। বিভিন্ন ধরণের প্রহেক্টরের দাম জানতে ফোন করুন- 02-55020006, 01979-300-940, 01719-300-940
প্রজেক্টর ব্যবহারে সাবধানতা
যেহুতু প্রজেক্টর একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস, তাই এটির ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন কর আউচিত। মনে রাখবেন, প্রজেক্টরের আলো যে অংশ দিয়ে বের হয় (আতশি কাচ) তাতে প্রজেক্টর চলাকালীন হাত দেওয়া যাবে না। এমনকি অন্য সময়ও এখানে হাত না দেওয়াই ভালো বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া। শক্ত কোনো কাপড় দিয়ে মোছা যাবে না নাহলে ঐ ফোকাস কাঁচে দাগ পড়ে যেতে পারে। এটি খুব সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে। বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার আগে সব কিছু ঠিক আছে কিন আতা চেক করতে হবে। খেলা দেখা বা সিনেমা দেখা শেষ হলে সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে রাখতে হবে।